অবসর কাটাতে কিংবা ব্যক্তিগত যে কোনো প্রয়োজনে আমাদের পাড়ি জমানো লাগতে পারে বিদেশে। বিদেশ ভ্রমণ কথাটা শুনলেই কোমন একটা আনন্দ কাজ করে মনে মধ্যে। কিন্তু বিদেশ ভ্রমণ যতোটা আনন্দের ঠিক ততোটাই ঝামেলায় পরিপূর্ণ। বিদেশ ভ্রমণের প্রস্তুতি থেকে শুরু করে পুরো ভ্রমণেই যেন আনুষ্ঠানিকতা ও নিয়ম নীতির শেষ নেই। তাই দেশের অভ্যন্তরীণ ভ্রমণের থেকে বিদেশ ভ্রমনের সময় আমাদের একটু বেশিই সচেতনতা অবলম্বন করা চাই। দেখা যায় তাড়াহুড়ো ও নিয়মনীতির পেরেশানিতে অনেক ছোটখাটো বিষয় নিয়ে ঝামেলায় পড়ে যেতে হয়।
বিদেশ ভ্রমনের আগে যে সকল বিষয়ের প্রতি বিশেষভাবে নজড় রাখতে হবে তার একটি তালিকা এখানে দেয়া হলো। এই ১০ টি টিপস যথাযথভাবে অনুসরণ করলে আশাকরি আপনার বিদেশ ভ্রমন তুলনায় অনেক স্বস্তিদায়ক হবে।
১. যতো বেশি সম্ভব তথ্য সংগ্রহ করুন
বর্তমান সময়ে যার কাছে যতো বেশি তথ্য থাকবে সে ততো সহজে ও সুচারুভাবে কোনো কাজ সম্পন্ন করতে পারবে। আপনি যে দেশ ভ্রমণের পরিকল্পনা করেছেন ঐ দেশ সম্পর্কে যতো বেশি সম্ভব তথ্য সংগ্রহ করুন। ঐ দেশের যাতায়াত ব্যবস্থা কেমন, খাওয়া দাওয়ার সিস্টেম কেমন, সেখানে গিয়ে ঘুরতে পারবেন এমন কী কী প্লেস আছে ইত্যাদি টুকিটাকি সকল বিষয় সম্পর্কে তথ্য জেনে নিন। এখন ইন্টারনেট এর সুবাদে কোনো দেশের পুরো সিস্টেম সম্পর্কে জানতে খুব বেশি বেগ পেতে হয় না।
পাশাপাশি আপনি যে দেশে যাবেন ঐ দেশের ভিসা কীভাবে পাবেন, কতো টাকা খরচ হতে পারে, কতোদিন মেয়াদের ভিসা পাবেন তার সকল তথ্য আগে থেকেই সংগ্রহ করে নিন। সার্বিক তথ্য আপনার হাতের নাগালে থাকলে আপনি বিদেশ ভ্রমনের পুরো প্রসেসিং কোনো সমস্যা ছাড়াই সম্পন্ন করতে পারবেন৷
২. পুরো ভ্রমণের একটি নীলনকশা প্রস্তুত করুন
যে কোনো কাজের আগে একটি পূর্নাঙ্গ পরিকল্পনা করে নিলে কাজ কয়েকগুণ সহজ হয়ে যায়। তাই আপনি আপনার ভ্রমণের একটি নীলনকশা অর্থাৎ পূর্বপরিকল্পনা করে নিন। কী উপায়ে যাবেন, কবে যাবেন, কয়দিন উক্ত দেশে অবস্থান করবেন তা সঠিক তারিখ ব্যবহার করে পরিকল্পনা করুন। সেখানকার কোন স্পট ঠিক কোন তারিখে ঘুরে দেখবেন, কী কী খাবেন, কোথায় অবস্থান করবেন তার সবকিছুই এই নীলনকশায় উল্লেখ থাকবে। পাশাপাশি কী কী শপিং করবেন এটাও উল্লেখ করতে ভুলবেন না। মোটকথা আপনার যাওয়া থেকে শুরু করে বিদেশে অবস্থান ও ফিরে আসা পর্যন্ত প্রতিটি কাজ স্টেপ বাই স্টেপ আপনি একটা পরিকল্পনা আকারে সাজিয়ে নিতে পারেন।
৩. সম্ভাব্য খরচের থেকে কিছুটা বেশি বাজেট রাখুন
যেহেতু আপনি ভ্রমণের পুরো একটি পরিকল্পনা করে নিয়েছেন, সুতরাং ইতোমধ্যে হয়তো সম্ভাব্য খরচটাও হিসেব করা হয়ে গেছে। আনুমানিক একটা খরচ হিসেব করে তবেই তো ভ্রমণের পরিকল্পনা করতে হবে। তবে টানটান খরচের হিসেব নিয়ে বিদেশের মাটিতে ভ্রমণ বোকামি ছাড়া আর কিছুই না। বিদেশের অচেনা পরিবেশে কখন কোন ঝামেলায় পড়ে যাবেন তা হয়তো নিজেও বুঝে উঠতে পারবেন না। তাই আনুমানিক খরচের থেকে কিছুটা বেশি বাজেট হাতে রেখে ভ্রমণ পরিকল্পনা করুন।
৪. সকল ডকুমেন্টস এর তথ্য শতভাগ নির্ভুল কিনা তা যাচাই করে নিন
পাসপোর্ট, ভিসা ও এয়ার টিকেট হাতে পাওয়ার সাথে সাথেই আপনার প্রথম কাজ হবে ডকুমেন্টস গুলোর সকল তথ্য নির্ভুল কিনা তা যাচাই করা। পাশাপাশি সবগুলো ডকুমেন্টস এর তথ্য একই কিনা তা ভালোভাবে যাচাই করে নিন। যাতে ইমিগ্রেশন এর সময় কোনো ধরনের সমস্যার কারনে আপনার ফ্লাইট মিস না হয়ে যায়। ডকুমেন্টে কোনো সমস্যা বা গড়মিল দেখা গেলে আপনার ফ্লাইটের তারিখের আগেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে সবকিছু ঠিকঠাক করে নিন।
৫. পাসপোর্ট ও ভিসার কয়েকটি সফট কপি ও হার্ড কপি তৈরি করে সাথে রাখুন
আপনি যেহেতু ভ্রমণের সময় সবগুলো লাগেজ সাথে নিয়ে ফ্লাইটে উঠতে পারবেন না তাই পাসপোর্ট ও ভিসার কয়েকটি ডুপ্লিকেট হার্ড কপি তৈরি করে নিন। প্রতিটি লাগেজে ও ব্যাকপ্যাকে কমপক্ষে একটি করে ডুপ্লিকেট হার্ড কপি রাখুন। দুর্ভাগ্যবশত আপনার কোনো ডকুমেন্টস এর মূল কপি হারিয়ে গেলে যাতে এগুলো দিয়ে বিপদ উদ্ধার করতে পারেন৷ এক্ষেত্রে স্মার্টফোনের সফট কপি সবথেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে৷ অনাকাঙ্ক্ষিত বিপদ এড়াতে এইটুকু সচেতনতামূলক কাজ করা উচিত।
৬. যাথাসম্ভব দেরিতে প্লেনের টিকেট কাটুন
আপনার ভ্রমণের নির্ধারিত তারিখের কাছাকাছি সময়ে প্লেনের টিকেট কাটার চেষ্টা করুন। কেননা বেশি আগে টিকেট বুকিং দিয়ে রাখলে খরচ একটু বেশিই পড়বে। ভালোভাবে খোঁজখবর নিয়ে যে উপায়ে কম খরচে টিকেট সংগ্রহ করা যায় তা অনুসরণ করুন। তাছাড়া অনেক আগে থেকে টিকেট কাটা থাকলে আর আপনার ভ্রমণ পরিকল্পনা কোনোভাবে বাতিল হলে এয়ার টিকেট এর পুরো টাকাটাই জলে যাবে। তাই যতোটা সম্ভব দেরিতে টিকেট কাটুন। এবং শতভাগ নিশ্চিত হয়ে সঠিক তারিখের জন্য টিকেট সংগ্রহ করুন।
৭. হোটেল বুকিং সংক্রান্ত বিষয়ে আগে থেকেই ব্যবস্থা নিন
দেশে থেকেই ঠিকঠাক করে নিন যে গন্তব্যে পৌঁছে আপনি কোন হোটেলে উঠবেন। নয়তো সেখানে গিয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে ভোগান্তির শেষ থাকবে না৷ নির্দিষ্ট হোটেল কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে কিংবা কোনো ট্রাভেল এজেন্সির সাথে যোগাযোগ করে পুরো বিষয়টি ক্লিয়ার করে নিন। কয়দিন থাকবেন, কতজন থাকবেন, কী ধরনের রুম লাগবে, খরচ কেমন হবে সব কিছু সম্পর্কে আগে থেকে চুক্তিবদ্ধ হয়ে নেয়া ভালো। প্রয়োজনে অগ্রিম বুকিং দিয়ে রাখুন। এতে আপনার ভ্রমনের অনেক বড় একটি ঝামেলার সমাধান হয়ে যাবে।
৮. লাগেজ যথাসম্ভব হালকা রাখুন
বিদেশ ভ্রমনের সময় কাপড়চোপড় ও ভাড়ী জিনিসপত্র দিয়ে লাগেজ ভাড়ী করে ফেলবেন না৷ ক্যারি করাটা যেমন কষ্টসাধ্য হয়ে উঠবে তেমনই ইমিগ্রেশন এর সময় আপনার জিনিসপত্রের ওজন নির্দিষ্ট সীমার থেকে বেশি হলে তা এয়ারপোর্টেই ফেলে যেতে হবে৷ বিশেষ করে ফেরত আসার সময় এই সমস্যায় পড়ার সম্ভাবনা বেশি। কোননা বিদেশে ঘুরতে গিয়ে শপিং করে লাগেজ বোঝাই করবেন না এটা তো ভাবাই যায় না৷ সুতরাং যাওয়ার সময়ই এই চিন্তাভাবনা মাথায় রেখে নিজের জিনিসপত্র প্যাক করুন। ওজনে হালকা এবং কয়েকবার ব্যবহার করতে পারবেন এমন পোশাক সাথে রাখুন৷ সেই সাথে নিজের অত্যাবশকীয় জিনিসপত্র যেমন: ঔষধ, চার্জার, পাওয়ার ব্যাংক, হেডফোন সাথে নিন।
৯. যে দেশে যাচ্ছেন সেখানকার নীতিমালা সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নিন
আপনার দেশে যেটা সাধারণ বিষয় সেই একই কাজ অন্য দেশে নিষিদ্ধ হতে পারে। তাই যে দেশে যাচ্ছেন ঐ দেশের নিষিদ্ধ কাজগুলো সম্পর্কে বিশেষভাবে জেনে নিন। নয়তো মোটা অঙ্কের জরিমানা তো গুনতে হবেই সেইসাথে জেল খাটার মতো ঘটনাও ঘটতে পারে। কিছু দেশে রাস্তায় দাঁড়িয়ে খাওয়া নিষেধ, কোথাওবা রাস্তায় ময়লা ফেলা নিষেধ, আবার কোনো দেশের মুদ্রা জুতার নিচে পড়লেই হতে পারে চরম অন্যায়। তাই এই ব্যতিক্রমী নিয়মগুলো সম্পর্কে অবগত হওয়া অত্যন্ত জরুরী।
১০. আপনি শারিরীক ভাবে শতভাগ সুস্থ্য এটা নিশ্চিত হয়েই ফ্লাইট বুক করুন
অসুস্থ শরীর নিয়ে বিদেশ ভ্রমনে যাওয়া মানে নিজেকে যেচে বিপদে ফেলা। হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে প্রয়োজনে ফ্লাইট ক্যান্সেল করে দিন তবুও এই অবস্থায় ভ্রমণ বাতিল করুন। কেননা বিদেশের মাটিতে গিয়ে আপনার মনে হবে সবকিছুই অপরিচিত। এরকম একটি পরিবেশে আপনার দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবে এমন লোক পাওয়া অসম্ভব।
তবে চিকিৎসার উদ্যেশ্যেই যদি বিদেশ যাওয়ার পরিকল্পনা করা হয় তবে তা আলাদা বিষয়।
আশাকরি বিদেশ ভ্রমনের পূর্বে এই ১০ টি টিপস মাথায় রাখলে আপনি একটি নির্ভেজাল ভ্রমণ অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারবেন। মনে রাখবেন একটি অসতর্কতা আপনাকে বিদেশের মাটিতে বড়ো ধরনের সমস্যায় ফেলতে পারে। তাই প্রতিটি পদক্ষেপে আপনাকে সচেতনতা অবলম্বন করতে হবে। আপনার বিদেশ যাত্রা সুন্দর ও সুপরিকল্পিত হোক এই কামনা রইলো।
ধন্যবাদ।